নদী বন্ধুয়ার খবর এনে দে
আকাশের অবস্থা ভালো না যখন তখন কেঁদে দিবে এই অবস্থায় বের হবার সিদ্ধান্ত ভুল নাকি সঠিক সেটা কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিল , ধূর এক জীবনে এতো পরিমাণ ভুল ঠিকের পর এই কিঞ্চিৎ বিষয়ে চিন্তা না করেই বের হয়ে হয়ে গেলাম যা আছে কপালে। মিজান ভাই টি এস সি তে বসে আছে আমি পৌছালে উদ্যানের গেইটে খাবো পকেটে টাকা কিঞ্চিৎ কম ফোনে যা শুনেছি দুজনের পকেটের টাকায় ৫/৬ টা রুটি আর একটা মুরগির ঝাল ফ্রাই হয়ে যাবার কথা।
উদ্যানের গেইটে ৩০ টাকায় ঝাল ফ্রাই হয় স্বাদ খারাপ না হলুদ মরিচ লবণ দিয়ে তৈরি এক বাটি ঝোল নামক বস্তুর উপর কয়েক টুকরো মুরগির মাংস, ঝোলের উপর তেল গোত্রীয় কিছু ভাসমান থাকে দেখতে অনেকটা বড় মাপের কোন শিল্পীর আর্ট করা ছবির মত যা বুঝা বড় শক্ত।
বাসা থেকে বের হবার পর দেখি এক রিকশা মামা রিকশার যাত্রীর সিটে বসে পা টা তার নিজের সিটে তুলে আয়েশ করে বসে বিড়ি টানছে বাম হাতের তর্জনী ও মধ্যমার মাঝে বিড়ির পশ্চাৎদেশ ঠোটের এক কোনে রেখে টান দিয়ে কয়েক সেকেন্ড রাখার পর তৃপ্তির সহিত বিড়ি বের করে তারো কয়েক সেকেন্ড পর ধোঁয়া ছাড়ে আহ দেখতে সৌন্দর্য লাগছে, বিড়ির মত এমন কু – খাবার দৃশ্য এতো সৌন্দর্য হতে পারে জানা ছিল না। এই দৃশ্য কে পাশ কাটিয়ে মূল রাস্তায় যেয়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি, কাকঘাড় আকাশ দেখে শহরের সব প্রেমিক প্রেমিকারা রিকশা ভ্রমনে বের হয়ে গেছে আর আমি দাঁড়িয়ে দেখছি দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে নিরশ ব্যাক্তি না হলে এমন দিনে আমিও প্রেমিকা নিয়ে রিকশায় চড়তে পারতাম!
রিকশা দেখলেই চড়তে ইচ্ছে করে কিন্তু আজকে পকেটের যা অবস্থা বিলাসিতা করতে গিয়ে রাতে অফিস ফেরত ব্যাচলার মত থাকতে হবে। কিন্তু ইচ্ছে টা এতো প্রবল হয়ে উঠলো হুট করে কিছু না ভেবে রিকশা দরদাম করা শুরু করলাম কাকঘার আকাশ দেখে রিকশা মামারা ভাড়া কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে দিয়েছে দশ মিনিট দরদাম করার পর ৫০ টাকায় ২৭ নাম্বার থেকে নীলখেত পর্যন্ত এক প্রথম বয়সি রিকশা চালক রাজি হলো, অফিস শেষ সময়েও রাস্থায় জ্যাম নাই আজকাল নাকি জ্যাম কম থাকে কি জানি জ্যাম নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নাই গত কয়েকবছর হলো একি জায়গায় শুয়ে বসে হেঁটে কাটিয়ে দিয়ে এখন কিঞ্চিৎ জ্যামে বসে থাকতে পারবো না তা হয় না।
জ্যামের কথা ভাবতে ভাবতে সীমান্ত স্কয়ার এর সামনে এসে রিকশা দাঁড়িয়ে পরলো, দু দিকে বিজিবির দুই সৈনিক রাইফেল হাতে রাস্তা আলগে দাঁড়িয়ে আছে মাঝখানে দিয়ে লালবাতি লাগানো গাড়ি আর্তনাদ করতে করতে ডুকে গেল পিলখানায়,কোন বড় কর্মকর্তা হবে হয়তো। রিকশা আবার চলতে শুরু করলো টয়টা ব সিরিয়ালের একটা সাদা গাড়ি রিকশার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো , গাড়িটা দেখে আপসোস হলো চাইলেই তারা আমার মত আকাশ দেখতে পারছে না চারদিক দিয়ে আবদ্ধ একটা রুমে বসে থেকে সামনের মানুষকে দেখছে। রিকশা নিউ মার্কেট পার হচ্ছে রাস্তায় জ্যাম না দেখে অবাক হয়েও হতে পারলাম না কারন আজ মঙ্গলবার নিউ মার্কেট বন্ধ মানুষ কম, আজকাল কত কিছু মনে রাখতে পারি না, আজকাল বললে ভুল হবে আগেও যে পারতাম তা কিন্তু না। এতো কম সময়ে নীলখেতে কখনো আসি নি।
রিকশার ভাড়া চুকিয়ে টি এস সির দিকে হাঁটা দিলাম কি ভাবা যায় ভাবতে ভাবতে টি এস সি পৌছে দেখি মিজান ভাই ও তার দল নতুন এক গানের সুর করছে, এক দুজন করে শুনতে এসে বিশাল গানের জটলা হয়ে গেলো আহারে আমার ভায়া কি গায় দলের অন্য আরেকজন কি সৌন্দর্য বাজায়, মানুষের কত গুণ এসব দেখে যে কারো হিংসা বা আফসোস হবার কথা এই মুর্হতে আমার একটাও হচ্ছে না বরং বেশ আছি মনে হয়।
গান শেষ হতে হতে মধ্য রাত হয়ে গেলো আশেপাশে মানুষ কমে গেছে চারপাশ ফাঁকা, মাঝে মাঝে শুধু পুলিশের গাড়ি নাকি অ্যাম্বুলেন্স আর্তনাধ করছে বুঝতে পারছি না,উদ্যানের গেটের সব দোকান বন্ধ, যে যার মত ফিরে গেছে কয়েকটা কুকুর আর আমরা দুইজন হাঁটতে হাঁটতে নীলখেত এসে খাবো ভাবছি কিন্তু নীলখেতে খাইতে হলে হেঁটে বাসায় আসতে হবে তার চেয় আবার রিকশা দিয়ে ফিরাতেই আমাদের আনন্দ, রাতে না খাওয়া শরীরের জন্য অতি ভালো তাই আবার দরদাম করে ৫০ টাকায় ২৭ পর্যন্ত রিকশা ঠিক করে ফিরছি শর্ত হলো রিকশা মামাকে গান শুনাবে মিজান ভায়া।
প্রায় প্রতিদিনই আমরা এ পথে মাঝ রাতে গলা খু্লে গাইতে গাইতে বাসায় ফিরি, মিজান ভায়ার মনোহর গলা সাথে আমার কাককন্ঠস্বর গলার মিলে যাবার ধরুন কেউ বুঝতে পারে না যে আমারটা শুনার মত না। মানুষ অবাক হয় কেউবা তাচ্ছিলতার সহিত বক্রহাঁসি দেয়,তাতে আমাদের বিশেষ কিছু আসে যায় না। এই গলা খুলে গাওয়াতে আমাদের আত্মার তৃপ্তি। আজ থেকে অনেকগুলো বর্ষা পরে যদি আমি আর ভায়া এই পথে রিকশা মামা কে শুনানোর জন্য কিংবা নিজেদের আত্মার তৃপ্তি জন্য গলা খুলে চিল্লায় গাইতে পারি ” ও নদী বন্ধুয়ার খবর এনে দে দেখি না তারে কত দিন জানি না কেমন আছে সে”।

