লাল ছেলেবেলা
															আমার রঙিন ছেলেবেলা। গরম একবারে তুঙ্গে গ্রামের সবাই বৃষ্টির জন্য ছাতক পাখির মত অপেক্ষা করছে আমরা তখন অপেক্ষা করছি মেলার,বৈশাখের শেষে আমাদের কয়েকগ্রাম মিলে মেলা হতো। সেই মেলায় দলবেঁধে বন্ধুরা যাবার অনুমতি মিলেছে সবে মাত্র , সাথে অবশ্যই একজন বড় মানুষ থাকতো, আমরা সবাই ৫ থেকে ১২ বছরের ছেলেপুলে। তখন আব্বা মেলার জন্য ৫০ টাকা দিত। এই টাকা দিয়ে আর কি মেলা হয়! কিন্তু আমাদের ৫০ টাকা নিয়ে কোন হতাশা ছিল না।
আমাদের নিজেদের টাকার উংস ছিল, মেলার একমাস আগে থেকেই টাকা জমানো শুরু করতাম, আসলে ঠিক টাকা না, বদ্দিরাজ (পিতরাজ) গাছের ফল থেকে বীজ হয় সেই বীজের তখন ভালো দাম পাওয়া যায়। এক মাস আগে থেকে সেই বীজ সংগ্রহ শুরু করতাম। খুব সকালে গ্রামের মক্তবে যেতাম আরবি পড়তে, হুজুর আসতো ৭ টায় আমরা দলবেঁধে ৬ টায় চলে যেতাম এক ঘন্টা সেই বীজ সংগ্রহ করতাম প্রতিদিন বীজ সংগ্রহ করে মাস শেষে প্রায় ১০-১৫ কেজি বীজ হতো। যার বীজ বেশি ভালো দামো তার বেশি।
মেলার সময় কাছাকাছি তখন আকাশ ভেঙ্গে ঝড় হতো। আমাদের মনে কালোমেঘ, মেলারদিন কি ঝড় থাকবে কি না।তখন শুক্রবারে মসজিদে দলবেঁধে দোয়া, ১ টাকা করে মসজিদে মানত করতাম যাতে মেলার দিন ঝড় না হয়! আমাদের অপেক্ষার পালা শেষ করে বৈশাখের শেষ দিন চলে এলো। মেলার দিন সকাল থেকে প্রস্তুতি শুরু করতাম, বীজ গুলো রোদে দিয়ে শুকিয়ে ব্যাগ ভরে করতাম। মেলার দিন দুপুরবেলা সবাই সংগ্রহ করে রাখা বদ্ধিরাজ বীজ একসাথে করে আমরা হটাঁ শুরু করতাম চোখে মুখে তখন আনন্দের বন্যা । মেলায় পৌছে শুরু হতো আমাদের বিক্রি যে বেশি দাম দিবে তার কাছেই বিক্রি করতাম, কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বিক্রি হতো। ১০ কেজি বীজ ১০০ টাকা বিক্রি করতে পারলে অনেক টাকা।সবার বিক্রি শেষ হলেই আমাদের ঘুরাঘুরি শুরু হতো।আমাদের মধ্যে যে সবার বড় সে আমাদের হাত ধরে মেলা ঘুরা শুরু করাতেন , সবার আগে জিলিপি, মেলা মানেই গুরের লাল জিলিপি খেয়ে শুরু।
															
