লাল ছেলেবেলা

Rafa Noman

আমার রঙিন ছেলেবেলা। গরম একবারে তুঙ্গে গ্রামের সবাই বৃষ্টির জন্য ছাতক পাখির মত অপেক্ষা করছে আমরা তখন অপেক্ষা করছি মেলার,বৈশাখের শেষে আমাদের কয়েকগ্রাম মিলে মেলা হতো। সেই মেলায় দলবেঁধে বন্ধুরা যাবার অনুমতি মিলেছে সবে মাত্র , সাথে অবশ্যই একজন বড় মানুষ থাকতো, আমরা সবাই ৫ থেকে ১২ বছরের ছেলেপুলে। তখন আব্বা মেলার জন্য ৫০ টাকা দিত। এই টাকা দিয়ে আর কি মেলা হয়! কিন্তু আমাদের ৫০ টাকা নিয়ে কোন হতাশা ছিল না।

আমাদের নিজেদের টাকার উংস ছিল, মেলার একমাস আগে থেকেই টাকা জমানো শুরু করতাম, আসলে ঠিক টাকা না, বদ্দিরাজ (পিতরাজ) গাছের ফল থেকে বীজ হয় সেই বীজের তখন ভালো দাম পাওয়া যায়। এক মাস আগে থেকে সেই বীজ সংগ্রহ শুরু করতাম। খুব সকালে গ্রামের মক্তবে যেতাম আরবি পড়তে, হুজুর আসতো ৭ টায় আমরা দলবেঁধে ৬ টায় চলে যেতাম এক ঘন্টা সেই বীজ সংগ্রহ করতাম প্রতিদিন বীজ সংগ্রহ করে মাস শেষে প্রায় ১০-১৫ কেজি বীজ হতো। যার বীজ বেশি ভালো দামো তার বেশি।

মেলার সময় কাছাকাছি তখন আকাশ ভেঙ্গে ঝড় হতো। আমাদের মনে কালোমেঘ, মেলারদিন কি ঝড় থাকবে কি না।তখন শুক্রবারে মসজিদে দলবেঁধে দোয়া, ১ টাকা করে মসজিদে মানত করতাম যাতে মেলার দিন ঝড় না হয়! আমাদের অপেক্ষার পালা শেষ করে বৈশাখের শেষ দিন চলে এলো। মেলার দিন সকাল থেকে প্রস্তুতি শুরু করতাম, বীজ গুলো রোদে দিয়ে শুকিয়ে ব্যাগ ভরে করতাম। মেলার দিন দুপুরবেলা সবাই সংগ্রহ করে রাখা বদ্ধিরাজ বীজ একসাথে করে আমরা হটাঁ শুরু করতাম চোখে মুখে তখন আনন্দের বন্যা । মেলায় পৌছে শুরু হতো আমাদের বিক্রি যে বেশি দাম দিবে তার কাছেই বিক্রি করতাম, কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বিক্রি হতো। ১০ কেজি বীজ ১০০ টাকা বিক্রি করতে পারলে অনেক টাকা।সবার বিক্রি শেষ হলেই আমাদের ঘুরাঘুরি শুরু হতো।আমাদের মধ্যে যে সবার বড় সে আমাদের হাত ধরে মেলা ঘুরা শুরু করাতেন , সবার আগে জিলিপি, মেলা মানেই গুরের লাল জিলিপি খেয়ে শুরু।

 

মেলার লাল জিলিপি

তারপর তরমুজ,মুড়কি চানাচুর খাওয়া । আগে এক চক্কর দিয়ে মেলা দেখে কেনাকাটা শুরু করতাম , ঘুরি, নাটাই, লাটিম,বন্দুক, চাকতি গাড়ি,বাঁশি , লাল জিলিপি, মুড়ি, কার্টুন মিলানো। কেনাবেচা শেষ হতে না হতেই আকাশ কালোমেঘে আনাগোনা শুরু, তখন শুরু আরেক ঝামেলা গ্রামের যার সাথে দেখা হতো সবাই বলতো” তারাতারি বাড়ি যেতে বলছে তোদের মায়েরা ” যার সাথে দেখা সবারি এক কথা। আর গ্রামের নানা-দাদা টাইপের কেউ থাকলে তো ঝাড়ি দিয়ে , হাতি – ঘোড়া টাইপের বাতাসা কিনে দি।
বিকালের আলো থাকতে থাকতে আমাদের মেলা শেষ করে বাড়ি যাবার কথা , বাড়ি ফেরার সময়
একেকজনের হাত ভর্তি জিনিস পত্র নিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা নামা শুরু গ্রামে। সন্ধ্যার পরেই ঝড় নামতো, আর গরমের ঝড় মানে আম কুড়ানো। প্রতি বছরি এটা আমাদের রুটিন ছিল একবার তো বিকালবেলায় ঝড় শুরু হয়ে গেছে আমরা দৌড়ে মেলা থেকে ফিরতেছি অর্ধেক রাস্থায় এসে দেখি মা চাচিরা দাড়িঁয়ে আছে আমাদের জন্য। সেদিন আমাদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছিলো আরেকটা।তখনি কড়া করে বলা হতো পরের বার থেকে মেলায় যাওয়া নিষেধ। কে শুনে কার কথা পরের বছর আবার যেতাম তখন তো বড় হয়তেছি সাহস বাড়ছে ধীরে ধীরে। আহারে কি রঙিন ছেলেবেলা ছিল আমার! ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা।

{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.singularReviewCountLabel }}
{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.pluralReviewCountLabel }}
{{ options.labels.newReviewButton }}
{{ userData.canReview.message }}

Hi, I'm Rafa

Welcome to my world of exploration! I’m a passionate travel blogger from Bangladesh, dedicated to showcasing the incredible beauty and rich culture of my homeland.

Find us on Facebook