বিরান পৃথিবীর পথে
Rafa Noman
আপডেট টাইম : সেপ্টেম্বর, ১২, ২০২৫, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ
						পাঠক পড়েছে || ৩৮
						
															তাপমাত্রা ৪০ ছুঁই ছুঁই আকাশে গনগনে দুপুরের রোদ এমন রোদ মাথায় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি।  গতরাতে ভালো ঘুম হয় নি।আমার ঘুমের তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু গত রাতে হলো, কেন হলো তা ভেবে পাচ্ছি না!ভুলে রোদ চসমা টা ফেলে এসেছি রোদের তেজে  তাকাতে পারছি না।
হুট হাট এমন মধ্য দুপুরে পৃথিবীর পথে বের হয়ে যেতে ইচ্ছে করে, আজও বের হয়েছি। কোথায় যাবো জানি না আমার গন্তব্যহীন যাত্রা ভালো লাগে। কিছু দিন আগে চাকরি টা ছেড়ে দিয়েছি ফলস্বরূপ একটা জীর্ণশীর্ণ মানিব্যাগ। তাই হেঁটেই যেতে হবে যেখানেই যাই। শহর থেকে দ্রুত বের হতে হবে ধুলো আর গাড়ির পে পু সহ্য হচ্ছে না একদম। ইদের কেনাকটার ধুম লেগেছে সবার হাতে হাতে কাপড় না হয় জুতোর ব্যাগ।এক পিচ্চি মায়ের সাথে মারামারি করছে সাইকেল কেনার জন্য মা বুঝানোর চেষ্টা করছেন কাজ হচ্ছে না, কিনে দিতেই হবে হয়তো । রাস্তায় প্রচন্ড ভিড়।
যে যত মানুষের ভিড়ে থাকে সে তত একা। এই মুহুর্তে আমিও একা ভীষণ রকমের একা।শহর থেকে বের হয়ে গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটছি। সাহরী তে তিনটা খেজুর আর একটা এলাচ খেয়েছিলাম, শরীরও তেমন সঙ্গ দিচ্ছে না। ইদানিং আমার অবাক হবার ক্ষমতা প্রচন্ড রকম বেরে গেছে এই ভর দুপুরে রাস্তার পাশের দুই বাড়ির মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে তুমুল ঝগড়া। পৃথিবীতে যত ঝগড়া হয় তার কারণ বিশ্লেষণ করলে বেশিরভাগই অতি তুচ্ছ ! ঝগড়া দেখতে ছোট খাটো ভিড় তৈরি হয়েছে, মানুষ অবাক হয়ে ঝগড়া দেখছে,আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। কি যুক্তি তর্ক!
ধীরে ধীরে সবার গলা নেমে আসছে রোজা রেখে খালি গলায়  এতোসময় ঝগড়া করা সম্বভ না।ঝগড়া শেষে আবার গলায় গলায় ভাব গ্রামের নিত্য দিনের জীবনধারা।এই রোদ মাথায় নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর ক্লান্ত লাগছে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে  আর হাঁটতে ইচ্ছে করছে না। কোথাও বসতে পারলে মন্দ হতো না
কিছু দূর সামনে নোহা গ সিরিজের একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে  পিছনে জটলা একজন দুটো ব্যাগ তুলছে তাতে বড় বড় করে লেখা শাহজাহান  নিচে গ্রামের নাম কাশারচর তার নিচে পাসর্পোট সাইজের রঙিন ছবি বুঝাই যাচ্ছে  দেশ ত্যাগ করছে।একটু দূরে একটা দোকানের  সামনে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছি, গাড়িতে ৩/৪ জন বসে আছে বাচ্চাকাচ্চা সহ । শাহজাহান সাহেব একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন হাঁসিমুখে।  গাড়িতে উঠার আগে মায়ের কাছে বিদায় নেবার সময় সালাম করার জন্য পা ধরে উঠলেন মা বুকে নিয়ে কান্না করছেন। শাহজাহান সহ্য করতে পারি নি সে নিজেও কান্না করে যাচ্ছে,এই দৃশ্য দেখে পাশে অনেকে চোখ মুছে যাচ্ছেন।
সৃষ্টি কর্তা মানুষকে এতো ক্ষমতা দিলেন কিন্তু প্রিয় মানুষকে বিদায় দেবার ক্ষমতা কেন যে দিলেন না! আমার চোখ ভিজে আসছে কেন বুঝতে পারছি না শাহজাহান সাহেব কিংবা তার পরিবার কাউকে আমি চিনি না তবু কেন এমন হচ্ছে বলা মুশকিল।পৃথিবীতে কিছু ঘটনা এমনি ঘটে যার কোন ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারে না।
কোন ভাবেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না!
ভেজা চোখ নিয়ে এখানে থাকা যাবে না  আশেপাশের মানুষ দেখার আগেই আমি চলে এসেছি, ফাঁকা রাস্তায় এসে চোখ আরো ভিজে আসছে এতো  নিঃসঙ্গ কোন দিন মনে হয় নি নিজেকে।এক পৃথিবী একাকিত্ব আমার  উপর  ভর করে আছে মনে হয়।ক্লান্ত শরীর নিয়ে দ্রুত হাঁটছি দ্রুত দ্রুত আরো দ্রুত।
বিরান মাঠের বুক ছিড়ে রাস্তা চলে গেছে দূরে। কিছু ধান অগ্রিম পেকে গেছে সেগুলো কাটা শুরু হয়েছে। অর্ধেক কাটা ধান খেতের পোকা খেয়ে পাখিরাও ফিরছে নীড়ে। সূর্যেরও বাড়ির ফেরার সময় চলে এসেছে, চারদিকে ইফতার তৈরির ধুম।ইফতার কিনে খাবার মত দোকান  বা টাকা কোনটাই নেই এ নিয়ে চিন্তা করারও ইচ্ছে করছে না।
গ্রামের কাঁচা রাস্তা  ধরে হাঁটছি চারদিকে এতো আয়োজন তবু কোথায় কোথায় এতো নিরবতা কেন যে  তা বুঝা কঠিন। আমি এতো কঠিন চিন্তা নিতে পারি না।
কিছুটা সামনে একটা ছোট টং দোকানে এক বুড়া চাচা ইফতার তৈরি করছে ।কাঁচা রাস্তা থেকে দুই দিকে দুটো রাস্তা চলে গেছে দুই গ্রামে। যাবার রাস্তার মাথায় মোড়ে চাচার দোকান । ছোট দোকান  চা, পান , বিড়ি এইসব ছাড়া তেমন কিছু বিক্রি করে না।  দোকানে বাঁশের চাঙ্গারি বসতেই চাচা হাসি দিয়ে  কি যেন পড়তে পড়তে  দুটো বেগুনি আর ডালপুড়ি ভাঙাতে মন দিলেন, হাসি দেখে মনে হলো আমাকে চিনেন!
আশেপাশে এমন কোন বাড়িতে আসি নি যেখানে গিয়ে ইফতার করা যাবে। চাচা মনে হয় বুঝতে পেরেছেন।তাই নিজে থেকেই বললেন কাকা ভিতরে এসে বসেন  আজানের সময় হয়া গেছে।আমিও দেরি না করে চলে গেলাম। ভেতরে আয়োজন সামন্য ছোট এক পুঁটলি  মুড়ি অল্প ছোলা দুটো করে বেগুনি আর ডালপুড়ি আর দুটো খেজুর সাথে ছোট এক জগ লেবুর শরবত। গ্লাসে  শরবত ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন আমি না করতে পারি নি।আজানের হুইসেল দেয়ার সাথে সাথে  চাচা দোয়া ধরলেন আমিও সাথে যোগ দিলাম মনে মনে দোয়া চলছে আল্লাহ্র কাছে  কি চাইবো ভাবতে ভাবতে দোয়া শেষ!
খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু, মুড়ি মাখানো একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন চাচা প্রথমে ছোলা  বেগুনি ডালপুরি একসাথে সরিষা তেল দিয়ে মেখে তারপর চানাচুর পেয়াজ মরিচ টমেটো আলাদা মেখে মাঝখানে মুড়ি দিয়ে তার উপর সরিষা তেল দিয়ে মুড়ি তৈরি। মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে খাওয়ার মত স্বাদ। চাচার সংসার চলে এই চা পান বিক্রি করে। জুইতের মানুষ।
আমার শুধু ভালো মানুষের সাথে পরিচয় । চাচা নামাজে দাঁড়াবেন আমি বিদায় নিয়ে চলে আসার আগে ধন্যবাদ দিতে যাবো  কিন্তু উনি আফসোস  করে বলছেন”  আল্লাহ্ আপনার রিজিক রাখছে আমার দোকানে  কিন্তু দেহেন গরিব মানুষ ইফতারে কিছুই খাওয়াতে পারি নি” আমার
আবার চোখের কোণে পানি জমছে চাচার কথা শুনে এখানেও বেশিক্ষণ থাকা যাবে  না। ভেজা  চোখ নিয়ে আবার হাঁটছি বিরান পৃথিবীর পথে পথে……
							{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.singularReviewCountLabel }}
                        
						
							{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.pluralReviewCountLabel }}
						
						
							
							{{ options.labels.newReviewButton }}
						
						{{ userData.canReview.message }}
					
															Hi, I'm Rafa
									Welcome to my world of exploration! I’m a passionate travel blogger from Bangladesh, dedicated to showcasing the incredible beauty and rich culture of my homeland.								
				
