টিপু সুলতান: ভারতের মাইসোরের বাঘ

Rafa Noman

কথায় আছে, যারা পুরো পৃথিবী ঘুরার শখ রাখে তারা শুধু পুরো ভারত ঘুরতে পারলেই পুরো পৃথিবী দেখার স্বাদ পাবেন। আমাদের পুরো ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি—সব কিছুই ভারতে পাওয়া যাবে। আমাদের পুরো ইতিহাসের বেশিরভাগই ভারতেই বীজ বপন করা। অভিন্ন ভারত থেকেই এখন এই দেশগুলো হয়েছে।

আজকে আমরা যাচ্ছি সেই অভিন্ন ভারতের একজন মুসলমান রাজার ইতিহাস জানতে।

ভারতের দক্ষিণ তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের একটি জেলা ভেলুর। বর্তমানে ভেলুর বিখ্যাত ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল (সিএমসি ভেলোর)-এর জন্যই। যারা চিকিৎসা করতে যান বা শুধু ইতিহাস জানতে গেলেও এই টিপু সুলতানের স্মৃতিবিজড়িত স্থান দেখে আসতে পারেন।

আমাদের গন্তব্যে যাত্রা শুরু সি এম সি হাসপাতালের সামনে থেকে—অটো কিংবা হাঁটা পথে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন Tipu Mosque। গুগল ম্যাপেও যেতে পারেন। অটো তে গেলে ২০ টাকা ভাড়া লাগবে। তবে হাঁটাই ভালো দুই পাশের বাহারি রকমের খাবারের দোকান দেখে দেখে পৌছে যাবেন মসজিদে  মেইন রোডরে সাথেই মসজিদ ও কবরগুলো।

টিপু সুলতান: ভারতের মাইসোরের বাঘ

 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে টিপু সুলতান এমন এক নাম, যিনি সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে আছেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতে তিনি যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তা তাঁকে দিয়েছে “Tiger of Mysore” — মাইসোরের বাঘ — এই সম্মানজনক উপাধি।

১৭৫১ সালের ২০ নভেম্বর কর্ণাটকের দেবনহল্লিতে জন্ম নেন টিপু সুলতান। তাঁর পিতা হায়দার আলী ছিলেন মাইসোর রাজ্যের সেনাপতি এবং পরে শাসক। শৈশব থেকেই টিপু ছিলেন মেধাবী ও সাহসী। ফরাসি সেনাদের কাছ থেকে সামরিক কৌশল ও অস্ত্রশিক্ষা নিয়েছিলেন, যা পরে তাঁর যুদ্ধে বড় ভূমিকা রাখে।

হায়দার আলীর মৃত্যুর পর ১৭৮২ সালে টিপু সুলতান মাইসোরের সিংহাসনে বসেন। তিনি শুধু যুদ্ধজয়ী রাজা ছিলেন না, বরং একজন দূরদর্শী শাসকও ছিলেন। তাঁর শাসনামলে—

কৃষি ও বাণিজ্যে নতুন নীতি চালু হয়, স্থানীয় শিল্প ও হস্তশিল্প উন্নত হয়, প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নতুন মুদ্রা ও ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন।

এই সংস্কারগুলো মাইসোরকে দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে উন্নত রাজ্যগুলোর একটিতে পরিণত করেছিল।

টিপু সুলতান জীবনে চারবার আঙ্গলো–মাইসোর যুদ্ধ করেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে। তাঁর লক্ষ্য ছিল মাইসোরকে স্বাধীন রাখা এবং ব্রিটিশ প্রভাব থেকে মুক্তি দেওয়া। তিনি ফ্রান্সের সঙ্গে জোট গড়েছিলেন, কারণ ফরাসিরাও তখন ব্রিটিশদের প্রতিদ্বন্দ্বী।

চতুর্থ যুদ্ধে (১৭৯৯ সালে) তিনি সেরিঙ্গাপট্টম দুর্গে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে শহীদ হন। তাঁর শেষ উক্তি ছিল—

“বাঘের মতো একদিন বাঁচা ভালো, হায়নার মতো একশ বছর বাঁচার চেয়ে।”

টিপুর মৃত্যুর পর ব্রিটিশরা মাইসোর দখল করে নেয়। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের বন্দি করে ভেলুর দুর্গে পাঠানো হয়, যেখানে তাঁদের জীবনের অবশিষ্ট সময় কাটে নজরবন্দি অবস্থায়। এই বন্দিত্বের সময় বহু পরিবারের সদস্য অসুস্থতা ও দুঃখে মারা যান। তাঁদেরই স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে গড়ে ওঠে টিপু সুলতানের পরিবারের কবরস্থান, যা ভেলুর দুর্গের কাছেই অবস্থিত।

সি এম সি হাসপাতালের খুব কাছেই Tipu Mosque নামে জায়গাটি পরিচিত।

এই এলাকাটিতে একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে “Tipu’s Mosque” নামে পরিচিত। মসজিদের স্থাপত্যে দাক্ষিণাত্য ও ইসলামি শৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়— উঁচু মিনার, গম্বুজ, খোদাই করা দেয়াল, এবং প্রাচীন আরবি লিপি।

মসজিদের পাশে রয়েছে কবরস্থান, যেখানে টিপু সুলতানের পরিবারের অনেক সদস্যের কবর রয়েছে। এই কবরগুলোর মধ্যে কিছুতে এখনো শিলালিপি ও তারিখ স্পষ্টভাবে পড়া যায়, যা ইতিহাস গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

মসজিদের পাশেই টিপু সুলতানের বোনের কবর এবং এর পাশেই রয়েছে একটু গোপন মাটির নিচে দুর্গ। অনেকগুলো নাম না জানা কবর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুরো এলাকাজুড়ে। সম্প্রতি এগুলোর সংস্কার চলছে।

যেহেতু ধর্মীয়ভাবে এখানে মানুষ এখনো নিয়ম পালন করে, তাই ঘুরতে গেলে অবশ্যই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য মেনে চলা উচিত।

টিপু  মসজিদের পাশেই একটি মন্দির এবং তার পিছনে বিশাল পাহাড় আছে।  তবে পাহাড়টি তে যাওয়া  সেইফ নয়।

 

বিঃদ্রঃ ঘুরতে গিয়ে কোথাও ময়লা ফেলবেন না এবং স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।

 

সেপ্টেম্বর ২০২৫

{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.singularReviewCountLabel }}
{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.pluralReviewCountLabel }}
{{ options.labels.newReviewButton }}
{{ userData.canReview.message }}

Hi, I'm Rafa

Welcome to my world of exploration! I’m a passionate travel blogger from Bangladesh, dedicated to showcasing the incredible beauty and rich culture of my homeland.

Find us on Facebook